কৃষি ডেস্কঃ কৃষককে গালমন্দ করে অফিস থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে কৃষক ফজলুর রহমান (৬৫) পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত একগুচ্ছ বোরোধান নিয়ে প্রতিকারে পরামর্শ চাইতে কৃষি অফিসে যান। কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভুক্তভোগী কৃষককে সমস্যা সমাধান না দিয়ে উল্টো তাকে গালমন্দ করে অফিস থেকে বের করে দেন।
ভুক্তভোগী কৃষক ফজলুর রহমান শিবালয় উপজেলার উথলী ইনিয়নের গহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
কৃষক ফজলুর রহমান জানান, এ বছর তার নিজস্ব ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে তার কচি ধান মারা যাচ্ছে। এতে তিনি খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে সমাধানের জন্য কিছু ধানের চারা নিয়ে কৃষি অফিসে যান। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তার ফোন নম্বর চান এবং তার পোকায় কাটা ধানের ভিডিওটি জেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে তাকে ভেতরে যেতে বলেন। তিনি ভেতরে গিয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি বললে কৃষি অফিসার তাকে কটাক্ষ করে বলে আপনিই শুধু কৃষক নাকি আরও কৃষক আছে? আমরা তো নিয়মিত বিভিন্ন চকে (জমিতে) যাই। এ রকম অভিযোগ তো আর কোনো কৃষক দেয়নি বলে তাকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগ দেন অফিসের অন্য স্টাফরাও। একপর্যায়ে কৃষক ফজলুর রহমানকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।
‘আমরা কৃষক মানুষ আমাদের টাকায় আপনাদের বেতন হয়, আপনি কেন জমিতে যাবেন না? এটাতো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ফজলুর রহমান এমন কথা বললে, জবাবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা
বলেন, আমি কি আপনার কামলা দেই? আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে। যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম’।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থেকে কৃষি ও কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার কথা থাকলেও তারা মাঠে যান না। তাই সকালে বাধ্য হয়ে একগুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যান ফজলুর রহমান।
উপজেলা চত্বরে ভূক্তভোগী কৃষক এ ঘটনা দুই সাংবাদিককে জানান। তারা ফজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় কৃষি অফিসে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা কৃষকের এই অভিযোগের বিষয়টি জানান। এ সময় সাংবাদিকদের সামনেই রাজিয়া তরফদার ওই কৃষকের সাথে ধমকের স্বরে কথা বলেন এবং আচরণ ঠিক হয়নি বলে তার দিকেই অভিযোগ তুলেন এবং ইংরেজীতে নানা বুলি আওরান। ওই দুই সাংবাদিক এর প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের ওপরও চড়াও হন ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
এ সময় সাংবাদিকরা কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কাছে অফিসিয়াল বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকের অভিযোগ শুনেছি। যদি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোনো দোষ থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় ও গণমাধ্যমকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার জেলার দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস.এম ফয়েজ উদ্দিনের স্ত্রী। এ কারণে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার দাপট দেখান সকল ক্ষেত্রেই। তিনি নিজে ঠিক মতো অফিস করেন না। যে কারণে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে না গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া সার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ও সিন্ডিকেট চক্রের সহায়তা করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কৃষি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ঘটনার বিষয় জানার পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ জানান, কৃষি অফিসের দায়িত্বই হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা। সেখানে কৃষকের অভিযোগের প্রতিকার না করে অফিসের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বোরো ক্ষেত দেখতে বুধবার জেলা থেকে একজন কর্মকর্তা পাঠানো হবে।
Leave a Reply