অর্থনীতি ডেস্কঃ সপ্তাহান্তে গেছেন গ্রামের বাড়িতে, তারও বিল নিয়েছেন সরকারি সফর দেখিয়ে। অফিসিয়াল সফর দেখানো হলেও প্রকৃত অর্থে তারা গ্রামে যেতেন সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনি) কাটাতে। এ জন্য কমিশন থেকে গাড়ি, গাড়ির জ্বালানি এবং খাওয়া বাবদ (ডিএ) বিলও তুলেছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান, ড. মো. হেলাল উদ্দিন ও ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে। বিইআরসিতে যোগদানের পর ১৭ মাসে একজন ১৮ দফায়, আরেকজন ১৩ দফায় নিজ জেলা সফর দেখিয়ে বিল তুলে নিয়েছেন। এমনকি ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন তারও বিল তুলে নিয়েছেন এক সদস্য।
কমিশনের সদস্য ড. মো. হেলাল উদ্দিনের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে। তিনি ১৭ মাসে ১৩ দফায় ৩৪ দিন সফর করেছেন কুমিল্লা। এমনও দেখা গেছে সাপ্তাহিক ছুটির আগে পরে মিল করে সফর করেছেন। ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল শুক্রবার গেছেন মুরাদনগরে, পরের সপ্তাহে (২৪ এপ্রিল) ৪ দিনের সফর করেন কুমিল্লা। তার সফরসূচির তালিকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একই সপ্তাহে ২বার ছিল কুমিল্লা। প্রথম দফায় ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সফর করেন। ওই সফরে জান্নাত ফিলিং এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড সরেজমিন পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন বিইআরসির নোটে। ৪ দিনের ব্যবধানে ৭ ফেব্রুয়ারি আবার কুমিল্লা সফরে যান ড. হেলাল উদ্দিন। এ দফায় ৪ দিনের সফর করেন নিজ জেলা কুমিল্লা।
বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে, ড. হেলাল উদ্দিন সফরের জন্য অফিসের গাড়ি, গাড়ির জন্য জ্বালানি ও গাড়ির চালক সঙ্গে নিয়েছেন। সরকারি ছুটির দিনে বেশিরভাগ সফর থাকায় গাড়ি চালকদের ওভারটাইম দেওয়া হয়েছে কমিশন থেকে। আইন অনুযায়ী কমিশনের গাড়ি চালকরা ২৫০ ঘণ্টার ওভারটাইম অথবা ১টি বেতনের সমান বিল দেওয়া বিধান রয়েছে। হেলাল উদ্দিন নিজ বাড়িতে গেলেও গাড়ির সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি খাওয়া বাবদ বিল তুলে নিয়েছেন সফরে।
একই সময়ে নিয়োগ পাওয়া কমিশনের সদস্য ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী যেনো এককাঠি বেশি সরেস। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের চিনাইর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সচিব ইয়ামিন চৌধুরী কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার পর ১০ দফায় ৩০ দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সফর করেছেন। আর ৮ দফায় সফর করেন পাশ্ববর্তী জেলা কুমিল্লা। চলতি বছরের ৩১ মে ৩ দিন সফর করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পরের সপ্তাহে ৬ জুন থেকে ফের ৩ দিন সফরে যান নিজ জেলায়।
ড. হেলাল উদ্দিন দৈনিক ভাতা (ডিএ) নিলেও ইয়ামিন চৌধুরী এই ভাতা নেন নি। তিনি গাড়ির সাপোর্ট, জ্বালানি ও ড্রাইভার নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিইআরসি সুত্র।
কমিশনের অপর সদস্য আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান তিনিও নিজ জেলা গাইবান্ধা সফর করেছেন ৬ দফায় ১৯ দিন। পাশের জেলা বগুড়া দুই দফায় ৮ দিন এবং আরেক পাশ্ববর্তী জেলা রংপুর সফর করেছেন ২ দফায়। এসব সফরে তিনি কমিশন থেকে গাড়ি, গাড়ির জ্বালানি ও চালক ও খাবার বাবদ অর্থ নিয়েছেন। বিভিন্ন পরিদর্শন কর্মসূচির নাম দেওয়া হলেও নিজ বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শিংজানীতে যাওয়া ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।
Leave a Reply