চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর চারঘাটে ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরীর অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। গত কয়েকদিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমাধানে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। একাধিকবার বিদ্যালয়টিতে পরিদর্শনে যাওয়ার অনুরোধ করলেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত হোননি সভাপতি বলে দাবি বিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। এতে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মাঝে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ ভুয়া সনদে গত ১ যুগ ধরে চাকরী পাওয়া বর্তমান প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম গত ৫ আগষ্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি সভাপতি। উপজেলার ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নের বাকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে এমন ঘটনা।
সরজমিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে চারঘাট প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে দেখা যায় বাকঁড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বন্ধ করে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে। উৎসাহ জোগাচ্ছেন ওই এলাকার শত শত এলাকাবাসী। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামীলীগ শাষনামলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সম্পুর্ণ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিয়মতান্ত্রীক উপায়ে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে বাদ দিয়ে জোর করে ভুয়া সনদ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম। এতে চরম অসন্তোস সৃষ্টি হয় তৎকালিন শিক্ষকদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা স্ব-শরীরে মঙ্গলবার সকালে সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারন এর জন্য স্বারকলিপি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন, রেজাউল করিম যে সনদে চাকুরী পেয়েছেন সেটি একটি ভুয়া। তিনি এ্যামিরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএড এর এর সার্টিফিকেট দেখালেও ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিবিএড এর কোন অনুমোদনই নেই। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ্যামিরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষনা করেন সরকার। তবে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু বিবিএ ম্যানেজমেন্ট ও বিবিএ মার্কেটিং বিভাগ অনুমোদন ছিল। অথচ ২০০৫ সালে এমিরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএড করেছেন বলে সার্টিফিকেট দিয়ে বাকঁড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরী নেন রেজাউল করিম। যেটি সম্পুর্নরুপে বেআইনী বলে দাবি শিক্ষক জালাল উদ্দিনসহ উপস্থিত একাধিক শিক্ষকদের।
জালাল উদ্দিন আরও বলেন, বিষয়টি জানার পর ২০১৮ সালে ভুয়া সনদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে সনদ জালিয়াতির বিষয় তদন্ত করেন সিআইডি রাজশাহী অঞ্চল। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন। সেখানেও তারা রেজাউল করিমের সনদটি জাল পান বলে দাবি শিক্ষক জালাল উদ্দিনের। তবে বর্তমানে সনদ জালিয়াতির মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। বর্তমান প্রধান শিক্ষকের জাল সার্টিফিকেট সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উর্ধ্বোতন কর্মকর্তার নিকট প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা সোহেল হোসেন।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার সনদটি জাল এখনো প্রমান হয়নি। আদালতের বিচারাধীণ রয়েছে। তাছাড়া আমি বিদ্যালয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে ছুটিতে আছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম বলেন, অনুপস্থিত শিক্ষক আমার কাছে ২/৩ দিন পর পর তো এসে বসে থাকে। সে যদি অসুস্থতার জন্য ছুটিতে থাকে তাহলে আপনার কাছে এসে কিভাবে বসে থাকে, এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি। তাছাড়া রেজাউল সাহেবের সনদের বিষয় আদালতে মামলা চলমান আছে। এখানে আমার কোন করণীয় নেই। শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ থাকলে তারা আমার কাছে আসে না কেন বলে প্রশ্ন ছুড়েন দেন বিদ্যালয়টি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম।
Leave a Reply