মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি – মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার নির্দেশ ছাত্রলীগের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সাবেক এমপি হাজী ফয়সাল বিপ্লবের হুকুমে হেলমেট পরে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করেছেন শহর ছাত্রলীগ সভাপতি নসিবুল ইসলাম নোবেল ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন সাগর।
গত ৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর দুটি ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রাপ্ত একাধিক ভিডিও বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। দুটি ভিডিওর মধ্যে একটি ৪ আগস্টের ও অপরটি ১৯ জুলাইয়ের। ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যে আগ্নেয়াস্ত্রধারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাচ্ছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এর মধ্যে অস্ত্রধারী একজন শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম নোবেল এবং অন্যজন সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাত হোসেন সাগর। ঘটনার দিন তারা পরিচয় এড়াতে ও নিজেদের নিরাপদ রাখতে হেলমেট, গামছা পরে গুলি করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দু’জনই পালিয়ে গেছেন। তারা এখন আত্মগোপনে। দু’জনই মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের বিশ্বস্ত সহচর বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ আগস্টের ভিডিওতে দেখা গেছে, শহরের কৃষি ব্যাংক এলাকায় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। এ সময় গামছা ও হেলমেট পরে সাগরকে ফিল্মি কায়দায় গুলি করতে দেখা যায়। তখন তাঁর গায়ে ছিল বেগুনি রঙের শার্ট ও গলায় গামছা। হাতে ছিল রুপালি রঙের একটি অবৈধ পিস্তল। তবে তখন তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল না।
অন্যদিকে ১৯ জুলাইয়ের এক ভিডিওতে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ-মুক্তারপুর সড়কের মিরেশ্বর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল ছাত্র-জনতা। খবর পেয়ে তাদের ওপর হামলা করেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ওই দিন হামলাকারীদের মধ্যে নোবেলের হাতে অস্ত্র দেখা যায়। এ সময় মাথায় হেলমেট থাকলেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল তাঁর মুখ।
এ ছাড়া গত ১৭ জুলাই সাগরের নেতৃত্বে শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় ছাত্রদের ওপর হামলা হয়। ওই দিন গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের তাড়া করেন নোবেল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অভিযোগ, শহর ছাত্রলীগের এই দুই নেতা ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীকে জুলাই ও আগস্ট মাসে একাধিকবার ছাত্রদের ওপর গুলি করতে দেখা গেছে।
গত ৪ আগস্ট দিনভর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা এদিন বিকেলে মুন্সীগঞ্জ বাজারে জেলা যুবদল নেতার ‘সবুজ ছায়া’ নামের একটি খাবার হোটেল ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায়ও সক্রিয় ছিলেন। এ ঘটনায় সাগর, নোবেলসহ ৩৩ জনকে আসামি করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান আহমেদ।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলি করে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় করা দুটি মামলায় সাগর ও নোবেলকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রিয়াজুল ফরাজী হত্যা মামলায় সাগর ৫ নম্বর ও নোবেল ৭ নম্বর আসামি। এ ছাড়া নুর মোহাম্মদ ডিপজলকে গুলি করে হত্যা মামলায় সাগরকে ১৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘটনার দিন আপনারা যা দেখেছেন, আমরা তাই দেখেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
সাগর ও নোবেলের নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গণখবরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় নৌকার প্রচার ক্যাম্পে হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাগর, নোবেলসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জুনায়েদ আহম্মেদ নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী।
সাগর মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দরজায় তালা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন– এমন একটি ভিডিও তিনি ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট রাতে আপলোড করেছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সিঁড়ি দিয়ে তাঁর সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় গিয়ে নতুন একটি তালা মূল দরজায় লাগিয়ে দেন। অভিযোগ রয়েছে, এমন অনেক অপরাধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে মানুষকে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাগর, নোবেলসহ তাদের সিন্ডিকেট।
Leave a Reply